ভিনেগার কি বা ভিনেগার কাকে বলে, ভিনেগারের কাজ কি, ভিনেগারের ব্যবহার, ভিনেগার কত প্রকার ও কি কি এবং ভিনেগারের সংকেত কি এসব বিষয়ে আজকের আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করতে চলেছি।
আমরা প্রায়ই ভিনেগার নামটি শুনে থাকি বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
সাধারণভাবে ভিনেগারকে রান্নার কাজে ব্যবহার করা হয়। ভিনেগার আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এর অনেক উপকারিতা রয়েছে।
এসব বিষয়ে আমি নিচে আলোচনা করেছি। সেই সাথে ভিনেগার কি কি দিয়ে তৈরি করা হয় সে বিষয়েও এই আর্টিকেলে আলোচনা করা হবে। এখন চলুন জেনে নেওয়া যাক ভিনেগার কি?
ভিনেগার কি ? (What is Vinegar in Bangla)
ভিনেগার হলো অ্যাসিটিক অ্যাসিড (CH₃COOH) দ্বারা গঠিত এক ধরনের তরল পদার্থ। ভিনেগার হলো এক প্রকারের বর্ণহীন তরল যা সাধারণত রান্নার কাজে বা খাদ্যের স্বাদ বৃদ্ধিতে এবং পচনরোধে ব্যবহার করা হয়। এর স্বাদ টক এবং গন্ধ তীব্র।
চিনি বা ইথানলকে গাজন প্রক্রিয়ায় অ্যাসিটিক এসিডে রুপান্তরিত করা হয়।
ভিনেগার সাধারণত বিভিন্ন ধরনের ফলের রস দিয়ে তৈরি করা হয়ে থাকে। এটি এমন একটি খাবার যা আপনার পরিবারের জন্য মহান চিকিৎসকের ভূমিকা পালন করতে পারে। অর্থাৎ অনেক রোগ-বালাই, অসুখ-বিসুখ এমনকি মরণব্যাধি রোগ থেকেও সুরক্ষা দিতে পারে।
রান্না, খাবার সংরক্ষণ এবং পরিষ্কার করার কাজে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও আরো বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভিনেগারের ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
ভিনেগার কাকে বলে?
সহজভাবে, ইথানয়িক এসিডের 4% থেকে 10% জলীয় দ্রবণকে ভিনেগার বলা হয়।
ভিনেগারের সাধারণ ঘনত্ব হলো ১০% অ্যাসিটিক অ্যাসিড। তবে, ভিনেগারের ঘনত্ব ১% থেকে ৯% অ্যাসিটিক এসিড পর্যন্ত হতে পারে। ঘনত্ব বৃদ্ধির সাথে সাথে ভিনেগারের স্বাদ তীব্র হতে থাকে।
ভিনেগার সস বা আচার সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়।
তাহলে আশা করি ভিনেগার কি বা ভিনেগার কাকে বলে এ বিষয়ে জানতে পেরেছেন। এখন চলুন জেনে নিই ভিনেগার কি কি কাজে ব্যবহার করা হয়?
ভিনেগার এর ব্যবহার
আমরা জানি ভিনেগার সাধারণত রান্নাঘরে রান্নার কাজে ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন সুস্বাদু আচার চাটনি এবং স্যালাড তৈরিতে ভিনেগার ব্যবহার করা হয়। এটি মূলত বিদেশি রান্নার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
এছাড়া চিকিৎসা ক্ষেত্রে এবং ত্বক পরিচর্যার ক্ষেত্রে এর বহুবিধ ব্যবহার রয়েছে। আমাদের ত্বক পরিচর্যার ক্ষেত্রে ভিনেগারের ব্যবহার রয়েছে।
ভিনেগার ব্যবহার করার ফলে আমাদের ত্বক সুন্দর হয় ওঠে এবং ত্বকের পরিচর্যা করা হয়।
খাদ্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ভিনেগার খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এছাড়া ভিনেগারের কাজ কি? ভিনেগার কত প্রকার ও কি কি? ভিনেগার ব্যবহারের উপকারিতা এবং এর সংকেত সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হয়েছে।
ভিনেগারের কাজ কি?
ভিনেগারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে। এটি খাবারকে সুস্বাদু করতে এবং ত্বক পরিচর্যার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সেইসাথে রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে অধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিভিন্ন জটিল রোগ নিরাময়ে তার ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
খাদ্য সংরক্ষণে ভিনেগারের গুরুত্ব: সিরকা বা ভিনেগার হচ্ছে ইথানয়িক এসিডের 4% -10% জলীয় দ্রবণ। খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণে সিরকা বা ভিনেগার ব্যবহার করা হয়।
কারণ ভিনেগারে ইথানয়িক এসিড জলীয় দ্রবণে আংশিক বিয়োজিত হয়ে হাইড্রোজেন আয়ন উৎপন্ন করে যা নিম্নরূপ:
CH3-COOH + H2O – CH3COO- + H+
খাদ্যদ্রব্য পচে যাওয়ার জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়া।
আর ভিনেগারের ইথানয়িক এসিডের H ব্যাকটেরিয়ার প্রোটিন ও ফ্যাটকে আর্দ্র বিশ্লেষিত করে। ফলে ব্যাকটেরিয়া মরে যায়।
এজন্য মাছ, মাংস ভালো রাখার জন্য সিরকা বা ভিনেগার ব্যবহৃত হয়।
ভিনেগারের বৈশিষ্ট্য
- ভিনেগারের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
- এটি মৃদু এসিড হওয়ায় খাবারের সাথে গ্রহণ করলে এসিডটি বাড়ার কোনো সম্ভাবনা থাকে না। বরং খাবার ও দেহের pH এর সমতা বজায় রাখে।
- এটি অম্লীয় দ্রবণ বিধায় এর প্রভাবে সংরক্ষিত খাদ্য দ্রব্যের দ্রবণের pH মান কমে যায়। অণুজীব বিশেষ করে ব্যাকটেরিয়া জন্মানো ও বংশবিস্তারের অনুকূল পরিবেশ পায় না। ইথানোয়িক এসিডের 6 % জলীয় দ্রবণের pH মান প্রায় 2.35 যা ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসের জন্য যথেষ্ট।
ভিনেগারের গুরুত্ব
ভিনেগার কৃষিপণ্য সংরক্ষণে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। যেমন:
পিকলিং: অণুজীব প্রতিরোধী তরলে পচনশীল খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণ পদ্ধতির নাম পিকলিং। রাসায়নিক পিকলিং প্রক্রিয়ায় ভিনেগার পৃথিবীব্যাপী সর্বাধিক ব্যবহৃত খাদ্য সংরক্ষক।
শীতের সবজি, পেঁয়াজ, রসুন, কাঁচামরিচ, মিশ্র সবজি প্রভৃতি পচনশীল কৃষিপণ্য ভিনেগারে ডুবিয়ে সংরক্ষণ করা হয়। কখনও কখনও খাদ্য দ্রব্যকে ভিনেগারসহ তাপ দিয়ে বা ফুটিয়ে রাখা হয়।
এতে ভিনেগারের অম্লীয় মাধ্যম ছাড়াও উত্তাপে অণুজীব ধ্বংস হয়ে যায় বলে খাদ্য সংরক্ষণে বেশি কার্যকর হয়। মাসের পর মাস, এমনকি বছরব্যাপী খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষিত থাকে
আচার তৈরিতে: বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, নেপাল ও ভুটান ইত্যাদি দেশসমূহে আম, জলপাই, কুল, লেবু, করমচা, মরিচ ও বিভিন্ন সবজির আচার তৈরিতে ভিনেগারের ব্যবহৃত হয়। আচার তৈরির মাধ্যমে কৃষিপণ্য সংরক্ষণ করা যায়।
ভিনেগারের উপকারিতা
ভিনেগার শুধু খাদ্য নিরাপত্তায় নয় আমাদের জৈবিক কাজকেও সহজতর করে। নিচে তা বিশ্লেষণ করা হলো:
ভিনেগারের জলীয় দ্রবণ অম্লীয় হওয়ায় এর সাহায্যে সংরক্ষিত খাদ্য সামগ্রীর দ্রবণে pH এর মান কমিয়ে দেয়।
ফলে অণুজীব বিশেষ করে ব্যাকটেরিয়া জন্মানোর ও বংশ বিস্তারের অনুকূল পরিবেশ পায় না। ফলে খাদ্যদ্রব্যের মান দীর্ঘদিন ঠিক থাকে।
এছাড়াও খাদ্যের সাথে সরাসরি পরিমিত মাত্রায় ভিনেগার গ্রহণ করলে শারীরিক বহুমাত্রিক উপকার সাধিত হয়।
এটি খাবারে রুচি আনে, রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে দেয়, হজমশক্তি বাড়ায়, শরীরে সৃষ্ট তরল অপদ্রব্য নিঃসরণে ভূমিকা রাখে, রক্তের অপ্রয়োজনীয় চর্বি বিদূরিত করে শরীরকে স্লিম রাখতে সাহায্য করে।
রোগ নিরাময়ে ভিনেগারের উপকারিতা
সাম্প্রতিক পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে যে ভিনেগার রক্তচাপ ও রক্তের কোলেস্টেরলের পরিমাণ হ্রাস করে। ভিনেগারসমৃদ্ধ খাবার ক্যান্সার ও টিউমার প্রতিরোধে ভালো কাজ করে।
ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ক্যান্সার, কোলেস্টেরন, কিডনির সমস্যা, হাইপার টেনশন এসকল জটিল রোগ নিরাময়ে ভিনেগার ব্যবহার করা হয়।
সুতরাং আমাদের শরীরের জন্য ভিনেগারের অনেক উপকারিতা রয়েছে।
ভিনেগার কত প্রকার ও কি কি?
ভিনেগার বিভিন্ন ধরনের ফলের রসের সমন্বয়ে তৈরি করা হয়ে থাকে। যে ফলের রস দিয়ে এটি তৈরি করা হয় সেই ফলের নাম অনুযায়ী এটির নামকরণ করা হয়ে থাকে।
তবে সাধারণভাবে ভিনেগার দুই ধরনের হয়ে থাকে।
- সাদা ভিনেগার এবং
- অ্যাপেল সিডার ভিনেগার
ভিনেগারের সংকেত কি?
ভিনেগারকে এসিটিক এসিড বলা হয়। ইথানয়িক এসিড বা এসিটিক এসিডের 4-10℅ জলীয় দ্রবণকে ভিনেগার বলা হয়।
ভিনেগারের সংকেত হলো CH3-COOH
ভিনেগার কাকে বলে: FAQ
ইথানয়িক এসিডের 4% থেকে 10% জলীয় দ্রবণকে ভিনেগার বলা হয়। ভিনেগার রান্না, খাবার সংরক্ষণ এবং পরিষ্কার করার কাজে ব্যবহার করা হয়।
ভিনেগার হলো অ্যাসিটিক অ্যাসিড (CH₃COOH) এর জলীয় দ্রবণ। ভিনেগারে এসিটিক এসিডের সাধারণ ঘনত্ব হলো ১০%। তবে, ভিনেগারে অ্যাসিটিক এসিডের ঘনত্ব ১% থেকে ৯% পর্যন্ত হতে পারে। ঘনত্ব বৃদ্ধির সাথে এর স্বাদ তীব্র হয়।
ভিনেগার হলো ইথানয়িক এসিডের ৬-১০% জলীয় দ্রবণ। এর রাসায়নিক সংকেত CH₃COOH।
ভিনিগারের মূল উপাদান হলো ইথানয়িক এসিড বা অ্যাসিটিক অ্যাসিড (CH₃COOH)।
ভিনেগার তৈরিতে Acetobacter ব্যাকটেরিয়া ব্যবহৃত হয়। Acetobacter ব্যাকটেরিয়া ভিনেগারের প্রধান উপাদান অ্যাসিটিক অ্যাসিড তৈরি করে।
সর্বশেষ
তাহলে ভিনেগার কি বা ভিনেগার কাকে বলে এ বিষয়ে আশা করি ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন।
যদি আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করবেন।
অসাধারণ আর্টিকেল দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ভাই♥️